Our website use cookies to improve and personalize your experience. Our website may also include cookies from third parties like Google, Youtube. By using the website, you consent to the use of cookies. We have updated our Privacy Policy. Please click on the button to check our Privacy Policy.

বিএনপি নেতা-কর্মীদের একের পর এক কারাদণ্ড

বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের একটি ফোরাম দাবি করছে, বিএনপির ‘শতাধিক’ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে কারাদণ্ড দেবার খবরটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়ছে। বিএনপির অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে ‘পূর্ব-পরিকল্পিত’ভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতারা যাতে ভবিষ্যতে প্রার্থী হতে না পারে সেজন্যই এই সাজা দেয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত।

গত সোমবার ঢাকা ও রংপুরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিএনপির ১৩০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়ার রায় দিয়েছে। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে, গত দুই দিনে বিএনপির ১৩৬ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যানবাহনে আগুন দেয়া, ভাংচুর, পুলিশের উপর হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগে ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব এবং যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

ঢাকা ছাড়াও রংপুরের একটি আদালত সোমবার ২০১৩ সালের মে মাসে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতার বিরুদ্ধে ১০ বছর করে কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী সাতই জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। সে হিসেবে নির্বাচনের মাত্র ৪৬ দিন বাকি আছে।

‘সাজা পূর্ব পরিকল্পিত?’

গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার জের ধরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বেশিরভাগই কারাগারে রয়েছেন।

দলটির পক্ষ থেকে ক্রমাগত দাবি করা হচ্ছে – সরকার পতনের আন্দোলনের জের ধরে তাদের ‘হাজার হাজার নেতাকর্মীকে’ গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার আসামী করা হয়েছে আরো অনেক নেতা-কর্মীকে।

বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সরকার তাদের উপর দমন নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। যা বরাবরই অস্বীকার করেছে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী। সরকার বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে যে, বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘সহিংসতার’ সাথে জড়িত।

নাশকতাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাজা দেয়ার ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, আসছে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই সাজার রায় দেয়া হয়েছে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল অভিযোগ করে বলেন, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে রায় এসেছে তা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় যে, মামলাগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ের করা হয়েছে এবং এর বিচারও হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য।

“এখানে মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। যাতে করে বিএনপির বিভিন্ন পদের দায়িত্বশীল যারা নেতাকর্মী আছে, তারা যেন রাজনৈতিক হয়রানি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে বিএনপির অনেক নেতা রয়েছেন যারা এরইমধ্যে সংসদ সদস্য পদে লড়েছেন কিংবা আগামীতে লড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

মি. কামাল বলেন, “সংবিধান অনুসারে তারা যাতে ভবিষ্যতে প্রার্থী হতে না পারে সেজন্যই এই সাজা দেয়া হয়েছে,”

মি. কামালের অভিযোগ, “আর এই সাজাও হিসাব করে দিয়েছে, দুই বছর এক মাস। অর্থাৎ কনস্টিটিউশনে (সংবিধানে) আছে, দুই বছর যদি কেউ সাজাপ্রাপ্ত হয়, সেই ক্ষেত্রে যাতে এটা অ্যাপ্লাই করতে পারে, সেই জন্যই এটা প্রি-প্ল্যানড, আর্টিকুলেটেড ওয়েতে কাজগুলো করা হয়েছে, হচ্ছে।”

সংবিধান অনুযায়ী, কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজা হলে এবং তার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে কেউ এমপি পদের যোগ্য হবেন না।

বিএনপি বলছে, যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একজন নিউমার্কেট বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়া চার বছর আগে মারা গেছেন।

সাজিদুল ইসলাম সুমন নামে একজন বিএনপির নেতা ১০ বছর যাবত এবং বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম জাকির গত আট বছর ধরে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তারা ‘গুমের’ শিকার।

মি. কামাল বলেন, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাজা হওয়াটাই প্রমাণ করে, “বিচার প্রক্রিয়াটাই এখানে ভুল ছিল।”

তার অভিযোগ, এইসব মামলায় আসামি পক্ষের যারা আইনজীবী ছিলেন তাদেরকে আসামীদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মামলা বা রায় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি দেখে হয় না। বরং যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকে এবং যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগের চার্জশিট দেয়া হয় তাদের বিরুদ্ধেই সাধারণত মামলা হয়।

“সেই মামলায় যদি কারো শুনানি শেষ হয়, সাক্ষী-প্রমাণ হয়ে যায়, আদালত রায় দিবে। সাক্ষী-প্রমাণ হয়ে গেলে তো আদালত রায়ই দিবে। আর কী করবে আদালত?”

বিষয়টি ‘অস্বাভাবিক’?

শাহদীন মালিক, আইন বিশেষজ্ঞ
ছবির ক্যাপশান,শাহদীন মালিক, আইন বিশেষজ্ঞ

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায়ের বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, দাপ্তরিকভাবে বলতে গেলে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাদের অপরাধের প্রমাণ করতে পেরেছে এবং এ কারণেই রায় দেয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের বিচারিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, যে রায়গুলো দেয়া হয়েছে, সেগুলো ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ফৌজদারি যত মামলা হয়, সেগুলোর বিচার শেষে আসামিদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ২০ শতাংশ। আর ৮০ শতাংশ মামলাতেই আসামীরা দোষী সাব্যস্ত হয় না।

“ওই রকম একটা ওভারঅল প্রেক্ষাপটে বিএনপির সবাই দোষী সাব্যস্ত হচ্ছে, এটা তো অস্বাভাবিক, সার্টেইনলি অস্বাভাবিক,” বলেন মি. মালিক।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১০ সালে দাপ্তরিক হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় ৩৬০০ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল।

“গত ১৩ বছর পর এই হত্যাকাণ্ডের কতগুলোর বিচার হয়েছে তার সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা না হলেও, মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, সেটা ২০ শতাংশের বেশি না। অন্যদিকে ধর্ষণের অভিযোগে যেসব মামলা দায়ের করা হয়, সেগুলোতেও বিচার হওয়ার হার মাত্র দুই-তিন শতাংশ”

মি. মালিক বলেন, এখানে নিশ্চয়ই পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এসব মামলায় যারা সাক্ষী তাদেরকে হাজির করেছে।

“এতো মামলায় সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করছে, এটা অন্যান্য ফৌজদারি মামলার তুলনায় অস্বাভাবিক হাই।”

সূত্রঃ বিবিসি

Related Posts