Our website use cookies to improve and personalize your experience. Our website may also include cookies from third parties like Google, Youtube. By using the website, you consent to the use of cookies. We have updated our Privacy Policy. Please click on the button to check our Privacy Policy.

বিদেশে অর্থ পাচারে কারা জড়িত?

টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার এ সংক্রান্ত তালিকায় ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। সূত্রমতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ১৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই’র) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। বাংলাদেশ থেকে যেই পরিমান অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে অনায়াসে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।

দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। এছাড়া জিএফআই’র প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা এবং তা দেশের (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। এর মানে প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, জিএফআই হল ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবৈধ আর্থিক প্রবাহ বা মুদ্রা পাচার নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে অর্থ পাচার রোধে বিভিন্ন রকম পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এরই অংশ হিসেবে প্রতি বছর তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

মূলত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পার্থক্য থেকে এই রিপোর্ট করে জিএফআই। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করে, দেশটি আবার ওইসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি দেখায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারি তথ্যে দেখা যায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য হচ্ছে তারা বাংলাদেশ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর মানে হল- বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলারের রফতানির তথ্য গোপন করেছে। ওই অর্থ পাচার করা হয়েছে।

আবার শিল্প বিনিয়োগে মন্দার মধ্যেও শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মতে, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির নামে দেশ থেকে টাকা পাচার করা হচ্ছে। কেননা যেভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি হয়েছে, সেভাবে শিল্পের উৎপাদন বাড়েনি। তাহলে আমদানি করা ওইসব শিল্প উপকরণ কোথায় গেল? এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্তে দেখা যায়, শিল্পের যন্ত্রপাতি ভর্তি কনটেইনারে পাওয়া গেছে ছাই, ইট, বালি, পাথর ও সিমেন্টের ব্লক। এতে শিল্পের কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে শুল্ক গোয়েন্দাদের তদন্তে খালি কনটেইনার আমদানির ঘটনাও ধরা পড়েছে।

কৃষিতে কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন হওয়ার পরও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে চাল আমদানি বেড়েছে। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তারপরও কেন চাল আমদানি হচ্ছে। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না হওয়ায় টাকা পাচার বেড়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের কাছ থেকে জানা গেছে দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ আসে বেসরকারি খাত থেকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, যে কারণে টাকা পাচার হচ্ছে।

এছাড়া দুর্নীতিও টাকা পাচারের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে তারা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে। আবার অনেকেই এ দেশে টাকা রাখা নিরাপদ মনে করেন না। ফলে টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত তিন বছরে মালয়েশিয়া সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিদেশির জন্য মালয়েশিয়ান সরকারের সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ। এর আগে মালয়েশিয়া সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ বাংলাদেশ।

দেশ থেকে বিদেশে কোনো টাকা নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। গত ১০ বছরে মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউকে কোনো অনুমোদন দেয়নি। এরপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ। যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমোদন নেই মালয়েশিয়ায় টাকা নেয়ার ব্যাপারে তারপরও টাকা চলে গেছে। অর্থাৎ এই টাকা পাচার হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।

কানাডায় বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করেন- এমন একটি এলাকার নাম হয়েছে বেগমপাড়া। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতারা ওখানে টাকা পাচার করে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হংকংয়ে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর অফিস রয়েছে। সেখানে তারা পুঁজি পাচার করে নিয়মিত ব্যবসা করছেন।

সরকার তার ভাবমূর্তি হারানোর ভয়ে এই অর্থ পাচারের তথ্য লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এগুলো করে লাভ হয় না। কারণ এসব খবর ধামাচাপা থাকে না বেড়িয়ে আসেই আর তাই ভাবমূর্তিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয় না।

Related Posts