‘কর্তৃত্ববাদীরা কখনও মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে রাজি না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী সরকারের চরিত্র কখনও গণমুখী হয় না।’
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি পেশাজীবী ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ‘ডামি’ সংসদ বাতিলের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই সরকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য যারা প্রজাতন্ত্রের বেতন নেয়, আর সচিবালয়ে যারা বসেন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা— এরা একটি সম্মিলিত সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ১৮ কোটি মানুষের অধিকার হরণে এবং তাদের নাগরিক অধিকার বলতে যা আছে, সব অধিকার খর্ব করে একটি কর্তৃত্ববাদ চায়। এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের চরিত্র কখনও গণমুখী হয় না। কর্তৃত্ববাদীরা কখনও মানুষের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বুঝতে রাজি না। কারণ, কর্তৃত্ববাদীরা কখনোই জনগণ কর্তৃক সমর্থিত হয় না। সে কারণে জনগণের প্রতি তাদের কোনও মায়া, মমতা অথবা সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ কখনও জন্মায় না। এদের কর্তৃতবাদ মনেই হলো দেশের অর্থসম্পদ লুটপাট করা।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার এমনভাবে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে যে, এখন তারা দুর্নীতি না করলে চাকরি যায়, অথবা দুর্নীতিতে সহায়তা না করলে চাকরি যায়। সুতরাং, আজকে সংসদ সদস্য আর দুর্নীতিবাজরা যখন একাকার হয়ে যায়, তখন বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান চিত্র এটাই হওয়া স্বাভাবিক। বাংলাদেশের কোষাগার কেন শূন্য? ব্যাংকগুলোতে কেন টাকা নেই? উন্নয়নের মধ্যে এত স্বাদ কেন? উন্নয়নের অপর নাম দুর্নীতি-লুটপাট।’
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের সরকার নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার ভারত, চীন রাশিয়ার সরকার। চীন ও রাশিয়ায় তো গণতন্ত্রের বালাই নেই। আর ভারতে এখন যা চলছে, সেই আগের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নেই।’
বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং করে যাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেকর্ড করতে পারিনি, এক সরকারের মেয়াদে ১৭৩ দিন হরতাল দেওয়ার। আমরা রেকর্ড করতে পারিনি, গান পাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে বাসে মানুষ মারা। আমরা এখনও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি চলমান পথিককে বিবস্ত্র করা। আমরা এখনও পারিনি লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে তার ওপর নাচ-গান করা। এসবের সংস্কৃতি কাদের মনে, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি কাদের মনে, যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকে।’
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আসনে দুইটি না তিনটি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তার মানে টুঙ্গিপাড়ায় মানুষ মরে না, অথবা গত পাঁচ বছরে কেউ মারা যায়নি, বিদেশে যায়নি, অসুস্থ হয়নি। আপনারা (সরকার) কিন্তু আপনাদের ফাঁদে পড়েছেন, আপনাদের কথার ফাঁদে পড়েছেন।’
বিএনপি এই নেতা আরও বলেন, ‘আজকে আপনারা (সরকার) সংসদে বসবেন, বসেন। আপনাদের কাজ আপনারা করেন। আমাদেরকে (বিরোধী দল) আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে দেন। আমাদের তো প্রতিবাদ জানানোর অধিকার আছে। আপনি শোনেন বা না শোনেন, সেটি আপনার বিষয়। কিন্তু আজকে আমাদের কোথাও কালো পতাকা মিছিল করতে দেবেন না। এদেশের মানুষ ভালোর ভালো, খারাপের খারাপ। তাই মানুষকে খারাপ করার চেষ্টা করবেন না। আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাতে চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের কোনও পেশার মানুষ আজ নিরাপদ নয়। এখানে কেউ ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিবাদ করতে পারে না। কারও জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। অনেক নেতাকর্মী ও পেশাজীবী নেতাদের গ্রেফতার করে কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে।’
বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল কুদ্দুস, অ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।