জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বেদম মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ বলেছে, ওই শিক্ষার্থীর গায়ে একটি টোকাও দেওয়া হয়নি। পরে মুচলেকা নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে স্থানীয় অভিভাবকের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে গতকাল রাতে ও আজ সোমবার সকালে কয়েক দফায় ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই হলের ছাত্র শাহরিয়াদ মিয়া ওরফে সাগর। তিনি মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। মারধরের পর আজ সকালে ছাত্রলীগ তাঁকে হল প্রশাসনের মাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেয়। পরে শাহরিয়াদকে তাঁর স্থানীয় অভিভাবকের হাতে তুলে দেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।
শাহরিয়াদকে মারধরে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা মাজেদুর রহমান, শাকিবুল ইসলাম ওরফে সুজন, ইউসুফ তুহিন, বায়েজিদ বোস্তামি, পিয়ার হাসান ওরফে সাকিবসহ কয়েকজন। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানের অনুসারী।
মারধরের অভিযোগকারী শাহরিয়াদ মিয়ার ভাষ্য, ‘একজনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথোপকথনের সূত্র ধরে রাত ১১টার দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আমাকে বিজয় একাত্তর হলের একটি কক্ষে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা আমার মুঠোফোন চেক করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমার হাত, কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কাঠ দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। সঙ্গে চলে অকথ্য গালিগালাজ। খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলে নির্যাতন বন্ধ হয়। সাংবাদিকেরা চলে যাওয়ার পর আবারও নির্যাতন শুরু হয়। আজ সকাল সাতটা পর্যন্ত আমাকে নির্যাতন করা হয়। তাঁরা আমাকে ঘুমাতে দেননি। আমার সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থীকেও তাঁরা মারধর করে।’
তবে মারধরের অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছেলে (শাহরিয়াদ) নিজের শিবিরসংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাঁর কাছ থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের নেতৃত্বস্থানীয় ১৩ জনের তথ্যও পেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ। তাকে চিহ্নিত করার পর হল প্রশাসনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করা হয়। তার গায়ে একটা টোকাও দেওয়া হয়নি। মারধরের অভিযোগ বানোয়াট।’
বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল বাছির বলেন, ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ওই শিক্ষার্থী স্বীকার করেছেন। এর জন্য সে অনুতপ্ত। তাঁকে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজয় একাত্তর হল থেকে দেওয়া সিদ্ধান্তের আলোকে তাঁর (শাহরিয়াদ) সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত পরিপন্থী এ ধরনের কাজে আর যুক্ত না হওয়ার বিষয়ে লিখিত মুচলেকা নিয়ে তাঁকে স্থানীয় অভিভাবক দুলাভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’