ভোলায় ২৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য প্রসেস প্লান্ট স্থাপন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পের জন্য কয়েকটি খাতে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। সমজাতীয় সমাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে যে কাজ ৯০ কোটি টাকায় করা হয়েছে সেই কাজের জন্য ১৭১ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রমতে, বাপেক্স কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের জন্য ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ ও স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন শেষে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের বিদ্যুৎ ও শিল্প উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এ ছাড়া উৎপাদিত গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন সম্ভব হবে, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সভা সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস গ্যাদারিং লাইনপাইপ, প্রায় ৫৬০ মিটার ৪টি খাল ক্রসিং ও আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ প্রসেস প্লান্ট সংগ্রহ, স্থাপন ও কমিশনিং বাবদ ১৭১ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। যেখানে সমজাতীয় সমাপ্ত প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯০.৯০ কোটি টাকা। সভায় অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
দ্বিগুণ ব্যয়ের বিষয়ে সভায় বাপেক্সের মহাব্যবস্থাপক বলেন, বার্ষিক ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলার রেট বৃদ্ধির কারণে ৬০ এমএমএসসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেস প্লান্ট ও মালামালের খরচের জন্য ১০৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত কিছু মালামাল ক্রয় করতে হবে যা সমজাতীয় সমাপ্ত প্রকল্পে ছিল না। ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বাপেক্সের মহা-ব্যবস্থাপক বলেন, বাপেক্সের আওতাধীন শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে একটি ৬০ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন গ্লাইকল ডিহাইড্রেশন টাইপ প্রসেস প্লান্ট এবং একটি ২ী৩৫ এমএমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন গ্লাইকল ডিহাইড্রেশন টাইপ প্রসেস প্লান্ট বিদ্যমান রয়েছে। উক্ত প্রসেস প্লান্টের মাধ্যমে মোট ৫টি কূপ থেকে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক কমবেশি ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে।
ভোলা জেলার ভেদুরিয়া সংলগ্ন স্থানে ভোলা নর্থ-১ কূপটি ২০১৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে ৩টি কূপে (টবগী-১, ইলিশা-১ এবং ভোলা নর্থ-২) বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোলা নর্থ-১, ভোলা নর্থ-২ এবং ইলিশা-১ কূপগুলো প্রস্তাবিত ভোলা নর্থ ক্ষেত্র থেকে ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত, কিন্তু শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে আলোচ্য কূপগুলো অনেক দূরবর্তী হওয়ায় অর্থনৈতিক এবং কারিগরি বিবেচনায় শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের প্রসেস প্লান্টের সঙ্গে উল্লিখিত কূপগুলোর সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব নয়। সে প্রেক্ষিতে ভোলা নর্থ-১, ভোলা নর্থ-২, এবং ইলিশা-১ গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদিত গ্যাস প্রসেসিংয়ের নিমিত্তে প্রস্তাবিত ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের ভেদুরিয়া ফেরিঘাট রোডের পাশে প্রসেস প্লান্ট স্থাপনের জন্য বাপেক্সের কারিগরি কমিটি কর্তৃক সুপারিশ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটির কয়েকটি খাতে বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিশন থেকে প্রকল্পের প্রধান প্রধান বিভিন্ন আইটেমের সঙ্গে সমজাতীয় প্রকল্পের প্রধান প্রধান আইটেমের তুলনামূলক ব্যয় বিবরণী ও ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ডিপিপিতে সম্পাদনাজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অন্যান্য অসামঞ্জস্যতা দূর করতে বলা হয়েছে।