‘বেলা দেড়টার দিকে ক্লাস শেষে সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে যাচ্ছিলাম। তখন দু-তিনজন ছেলে এসে আমাকে এক পাশে ডেকে নেয়। তারা নাম-পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। একপর্যায়ে ভ্যানে তুলে অনুষদ ভবনের নিচে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে, শিবির করি কি না। আমি বললাম, করি না। এটা শুনেই থাপ্পড় দেয় আমাকে। এরপর বলে বাড়িতে ফোন দিতে। কিন্তু আমার ফোনে টাকা না থাকায় দিতে পারিনি। এরপর আবার চড়থাপ্পড় দিয়ে বলে, দৌড় দে।’ কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জামাল কাজী।
তিনি অভিযোগ করেছেন, আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে তিনিসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির সন্দেহে মারধর করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, ক্যাম্পাসের অনুষদ ভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা জড়ো হয়ে কিছু একটা করতে যাচ্ছিলেন—এমন খবর পেয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’সহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। একপর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে যান তাঁরা। ছাত্রলীগ কাউকে মারধর করেনি।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী জামাল কাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গরিব পরিবার থেকে এসেছি। কোনো সংগঠনের সঙ্গে আদৌ জড়িত নই। কেন আমাকে মারল, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। আমি যা না, সে তকমা দিয়েই আমাকে থাপ্পড় মারা হলো।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী অনুষদ ভবনে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ওই দুই শিক্ষার্থী দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় ছাত্রলীগ অনুষদ ভবনের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের খোঁজ করে ও দরজায় আঘাত করে। এতে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে মহড়া দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মীর হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়। মহড়ায় ছাত্রলীগ নেতা বিপুল খান, কামরুল ইসলাম, শাহজালাল সোহাগ, জাকির হোসেন, শাহীন আলম, ইসতিয়াক শাওন, শিমুলসহ প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।