আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে আজ ঢাকাসহ সব জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে চলা হরতাল ও অবরোধের সাময়িক বিকল্প হিসাবে এ কর্মসূচিতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে চায় দলটি।
এজন্য বিএনপির হাইকমান্ড দায়িত্বশীলদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও অংশ নেবেন কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিপীড়নের চিত্র গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে। বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা তাদের ভূমিকা শিগগিরই আরও জোরালো করবে।
এদিন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি আজ মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করবে যুগপতে থাকা মিত্ররাও।
জানা গেছে, নির্বিঘ্নে এ মানববন্ধন সম্পন্ন করতে পারলে ব্যাপক সমাগম হয়, এমন কর্মসূচি শিগগিরই আরও ঘোষণা করা হতে পারে। অন্যথায় ফের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে ফিরবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় মানববন্ধন হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া কর্মসূচি সফলে ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাগুলোও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেড় দশক ধরে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৬৪৭ ব্যক্তি গুম হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ৩৯৯ জনকে জীবিত ফেরত পাওয়া গেছে অথবা গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, ৩ জনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৬১ জনের এখনো পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এদের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরুর মতো সংসদ-সদস্য, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, হুমায়ূন পারভেজ, জাকির, সুমন, দিনার, জুনেদসহ অসংখ্য বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকে অদৃশ্য করা হয়েছে। যদিও, আমাদের হিসাবে-প্রকৃত সংখ্যা আরও তিন থেকে চারগুণ বেশি। কারণ এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে শুধু গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে, আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি।’
আজ মানববন্ধন কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও কারাবন্দি ও গুম-খুনের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা অংশ নেবেন জানিয়ে রিজভী আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি পালনে দলের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সব জেলায় হবে এ কর্মসূচি। যেখানে মহানগর আছে, সেখানে জেলা ও মহানগর একসঙ্গে করবে। যেখানে মহানগর নেই তারা জেলা সদরে মানববন্ধন করবে।
জানা গেছে, ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানের মতো সিনিয়র নেতারা থাকবেন। তবে কৌশলের অংশ হিসাবে মামলা ও পরোয়ানা থাকা নেতাকর্মীদের মানববন্ধনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার নেই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সেটা প্রতিষ্ঠিত করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।
গণতন্ত্রমঞ্চসহ সমমনাদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি: এদিকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটও আজ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচি সফলে তারাও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামনে মানববন্ধন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
বেলা ১১টায় বিজয় নগর পানির ট্যাংক সামনে ১২ দলীয় জোট, একই সময়ে পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এলডিপি, পুরানা পল্টনে নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও ড. রেজা কিবারিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, হাইকোর্ট কদমফুল ফোয়ারা উল্টোদিকে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে মানববন্ধন করবে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।
দুপুর ১২টায় তোপখানা রোড মেহরাব প্লাজা সামনে মানববন্ধন করবে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। যুগপৎ আান্দোলনে না থাকলেও একই কর্মসূচি পালন করবে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। বেলা ৩টায় বিজয় নগরে কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
এছাড়াও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবও সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে। একই কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। তবে কখন কোথায় পালন করবে তা গণমাধ্যমে জানায়নি দলটি।