কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখবো দীর্ঘদিন পর ভেবে পাচ্ছি না দেশের নানা ঘটনায় দু’কলাম লিখতে বসলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম আমলের কিছু স্মৃতি নিয়ে। একটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কতো উন্নত তা সে দেশের রাজনৈতিক নেতা, রাজনীতিবিদ, ব্যক্তি কর্ম ও মানুষের আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে অনেকটা বোঝা যায়। রাজনীতি এমন এক সংস্কৃতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেখানে বিরোধ আছে, শত্রুতা নেই। কারণ রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। সবারই লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এখানে চাওয়া-পাওয়ার প্রশ্ন থাকে গৌণ। প্রাপ্তি যোগ যে রাজনীতিতে মুখ্য হয় সে রাজনীতি গণমুখী নয়, গণবিরোধী। বিশ্ব ইতিহাসে এমন বহু রাজনীতিবিদের নাম পাওয়া যাবে যারা জাতির সেবায় সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। এজন্যই তারা ইতিহাসের পথপ্রদর্শক ও অনুকরণীয় আদর্শের প্রতীক হয়ে আছেন।
সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ নির্বাচনে প্রথম শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেন। তারপর মাঝে বিএনপি সরকার। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন দিনের পর দিন হরতাল! আন্দোলন। আবার নির্বাচনে ২য় বারের মতো শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলো এইবার। চারদিকে এখন প্রবল গুঞ্জন আওয়ামী লীগ সরকার সব ব্যাপারেই এতো তাড়াহুড়া করছে কেন? দেশের অনেক মানুষ চেনে না তাদের বানানো হলো মন্ত্রী সিনিয়র নেতারা বোকা হয়ে গেলেন। ক্ষমতায় বসার কিছুদিনের মাথায় বিডিআর হত্যার ঘটনা, আগুন লেগেছে বহুস্থানে কয়েক মাস অতিত্রুম হচ্ছে মতিঝিলের হেফাযত ইসলামীদের ওপর হত্যার ঘটনা। মাঠে ঘাটে বা হাটে বাজারে আলোচনা হলেও সরকারি ও বেসরকারি অফিসপাড়ায় ও শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষের ড্রইং রুমে আলোচনা হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার আসলে কি চায়?
৩২ বছরের কাজ কি তারা ৩২ দিনে সারতে চায়? তা হলে সব ব্যাপারেই কেন এই শতব্যবস্থা? এর সাথে তারা সব ফ্রন্টেই হাত দিল কেন? বিরোধী দল নেত্রীর বাড়ি, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নতুন নামকরণ এসব দেখার পর অনেকেরই ধারণা হয়েছিল যে আর যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসে তাই অনেক কিছু করছে। সুতরাং বিএনপি দলীয় পলিটিক্যাল এ্যাপয়েন্টিদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।
প্রথমবার শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু পুরোনো ইতিহাস বলছি আওয়ামী লীগ সরকার (৫) পাঁচ জন রাষ্ট্রদূততে অব্যাহতি দিল। এরা হলেন সৌদি আরবের মীর নাসিরুদ্দিন, বাহরাইনের আখতারুল আলম, লন্ডনের ইউসুফ, দূরপ্রাচ্যের জুলমত আলী খান এবং আরো একজন। রাষ্ট্রদূতের নীচের পর্যায়ে বিশেষ করে প্রেস সেকশনের সিনিয়র অফিসারদেরকে অব্যাহতির কথাও জানে দেশবাসী। কিন্তু দেখা গেলো ঐ পাঁচজন রাষ্ট্রদূতের অব্যাহতিই শেষ ঘটনা নয়। বরং অনেকগুলো বড় ঘটনার শুরু। দেশের মধ্যে দেখা গেলো কয়েকজন সচিব থাকতে বেছে বেছে বিতর্কিত হয়ে পড়া একজনকে প্রধানমন্ত্রীর সচিব করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই এই দুই অফিসারের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে আর কারো বাকি ছিল না। এমন সময় শোনা গেলো যে বিতর্কিত আর একজনকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বুঝতে বাকি থাকল না যে আন্দোলনের উত্তঙ্গ মুহূর্তে যারা জনতার মঞ্চে উঠেছিল যারা বাংলাদেশ জিন্দাবাদকে সমালোচনা করেছিল যারা ‘জয়বাংলা’ এবং জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে প্রেস ক্লাব এবং চত্বর গরম করেছিল তাদেরকে এবার প্রশাসনের হৃৎপি- এবং নার্ভসেন্টারগুলোতে বসানো হচ্ছে। এভাবে সচিবালয়ের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির রদবদল প্রক্রিয়া যখন জোরেশোরে চলছিল তখন বিচারবিভাগে এলো এক দারুণ এলার্ন । দলীয় পরিচয়ের একজনকে এটর্নী জেনারেল নিযুক্ত করা হয়েছিল। কে তিনি? দেখা গেলো তিনি আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। দুর্মুখরা বললেন দলীয়করণ কাকে বলে এবার দেখো। দলীয়করণ কত প্রকার এবং কি কি সেটা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাবে। বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিগত পাঁচ বছর ধরে দলীয়করণের বিস্তর অভিযোগ তেমন নেই। যে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। সেটা মাত্রা ছাড়া হলেও সম্ভবত তারও একটা মাত্রা ছিল। তাদের আমলে এডভোকেট আমিনুল হককে এটর্নী জেনারেল নিযুক্ত করা হয়েছিল। কে না জানত যে তিনি ছিলেন একজন হার্ডকোর আওয়ামী লীগার। একবারে ইনার সার্কেলের লোক। নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঐ পদে বহাল ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসব ব্যাপারে কোন দুর্বলতা প্রকাশ করেনি। একেবারে খাস পার্টি ম্যানকে এটর্নী জেনারেল বানিয়েছে। জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াজ রহমানকে ওএসডি করে আনা হয়েছিল।তার অপরাধ তিনি নাকি মরহুম হামিদুল হক চৌধুরীর জামাতা এবং সেই সুবাদে দক্ষিণপন্থী। যাকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে সেই শাহাবুদ্দিন শানি মুক্তিযুদ্ধের সময় পক্ষত্যাগ করে প্রবাসী সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন। নেপালের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ আলীকে লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে বিএনপি তার ওপর নাকি রুষ্ঠ ছিল। তাই নেপালের মত একটি গুরুত্বহীন দেশে তার পোস্টিং দেয়া হয়। বিএনপি’র অসন্তুষ্টি নাকি মাহমুদ আলীর সাপে বর হয়েছিল, তাই তিনি তখন লল্ডনে ‘ত্রিুম পোস্টিং পাচ্ছেন’। এভাবে প্রসাশনের প্রায় সমস্ত বিভাগে এবং বিশেষ মন্ত্রীকে কূটনৈতিক পোস্টিং এর প্রধান মাপকাঠি নাকি হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের মাথাই শুধু বদল হয়নি দ্বিতীয় স্তরে ও তিন/চার জন মেজো সাহেবের অদল-বদল হয়েছিল তখন। পুলিশ এসপি, ডিআইজি, এডিশনাল, আইজি, কারো প্রশাসনের ডিআইজি, ব্যাংকসমূহের শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় বিরাট অদল-বদল হয়েছিল।
ব্যাংকের দশ বারোজন জেনারেল ম্যানেজার বদলী হয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর পরিচালনার বোর্ডেও রদবদল করা হয়েছে। রদবদলের ঢেউ লেগেছে সর্বত্র। পাইকারী হারে এসপিদের বদলি করা হয়েছিল! প্রশাসকদের একই দশা ছিলো। অভিজ্ঞরা বলছেন তখন পরিবর্তনের এমন ঝড়ো হাওয়া তারা আর দেখেননি।
কিন্তু ছাত্র ফ্রন্টে আওয়ামী লীগ সরকার এতটা কি করছেন প্রধানমন্ত্রী কি সব জায়গায় হাত দিতে চান? সরকারি আমলাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। কারণ কথায় বলে ‘ঘর কা মুরগি ডাল বরাবর, ধর আর জবাই কর’ কলমের এক খোঁচা মারলেই হলো। জাঁদরেল আমলারাও কুপোকাত। আজ রাজা কাল ফকীর। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে এ ধরনের সাঁড়াশি আক্রমণ চালানো হলো শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজেই দুই দফা কেন? দেশের সব চেয়ে নামী-দামী এই কলেজটি দুই দফা বন্ধ হলো কেন? অস্ত্র উদ্ধারের নামে খুব তো হাঁকডাক করা হলো। কিন্তু লালবাগ এলাকা থেকে কোন মহাপুরুষের মাসলম্যানরা স্টেনগান ও পিস্তলের গুলী হাতে ফোঁটাতে মেডিকেল হোস্টেলে ঢুকলো? ঐ রাতের তৃতীয় প্রহরে একটি বিশেষ দল এবং শীর্ষ নেতার নামে ধন্যি দিতে দিতে কার ঝটিকাবাহিনী সেদিন মেডিকেল হোস্টেলে প্রলয় কা- ঘটালো শুধুই কি ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্দুকের নলের মুখে এর আগে সলিমুল্লাহ মেডিকেল ছাত্রদল সমর্থক ছাত্রদেরকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ছিল বরিশাল মেডিকেল কলেজে। সাধারণ ছাত্রের ভোটের বলে নয় মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রেও শক্তিতে দখল করা ছিল বরিশাল মেডিকেল কলেজ। বের করে দেয়া হয়েছে ছাত্রদল সমর্থকদের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজও এই ঝটিকাবাহিনী থেকে রেহাই পায়নি। সম্ভবত এই সমস্ত ঘটনাকে টেক্কা মেরেছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এটিই একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানকার ছাত্ররা রাজনীতির ত্রিসীমায় থাকে না। অথচ দেখা গেলো অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৫/৭ জন শিক্ষক প্রত্যক্ষ দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়েছেন। এরা বুয়েটে সরাসরি আওয়ামী লীগ করা শুরু করেছিল বুয়েটের ছাত্রদের অভিযোগ ছিলো তারা শোক দিবস বা নাজাত দিবস কোনটাতেই জড়িত হতে চায় না। তারা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায় তাদের অভিযোগ তাদের ওপর শোক দিবস চাপিয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে ছাত্ররা। অভিযোগে প্রকাশ, বুয়েটের নিরীহ ছাত্রদেরকে শায়েস্তা করার জন্য সেখানে গিয়েছিল লালবাগের সেই ঝটিকাবাহিনী! তাদেরকে নাকি প্রত্যক্ষ ছায়া দিয়েছেন পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী আরো ন্যক্কারজনক। সন্ত্রাস দমন এবং অস্ত্র উদ্ধারের সংকল্প বার বার ডংকা নিনাদে প্রচার করা সত্ত্বেও তখন আওয়ামী লীগ সরকারের নাকের ডগার ওপর দিয়ে ছাত্রগীগের গোপালগঞ্জ গ্রুপ জয়ের মত হাতিয়ার উঁচিয়ে শহীদুল্লাহ হল দখল করে নিলো। শুধু দখল করাই নয়, ঐ হল থেকে তারা ছাত্রদলের সমর্থকদেরকে গায়ের জোরে বের করে দিলো। এসব অস্ত্রবাজ দখলদারদের অধিকাংশের বেশি নাকি অছাত্র এবং বাইরে থেকে আমদানি করা। অথচ তারা আজ মাসাধিককাল হলো গোঁফে তা দিয়ে শহীদুল্লাহ হলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করেনি। এই ভাবে আস্কারা পেলে যা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তাই ঘটেছে। অস্ত্র উঁচিয়ে প্রথম স্যার এফ. রহমান হল এবং পরে ফজলুল হক হল জবর দখল করা হয়েছিল। ছাত্রদলের সমর্থকদের শটগান উঁচিয়ে বের করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় হিন্দি ফিল্মি স্টাইলে বেশকটি মোটরসাইকেলে ছাত্রলীগের অস্ত্র বিশারদরা ফজলুল হক হল থেকে ছুঁটে এসেছে এবং ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগের স্রেফ সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সেখানকার প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছিলো। এর আগে নেত্রকোনা কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানোকে কেন্দ্র করে দুই দলে সংঘর্ষ হয় বহুবার। এই সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নির্বিচার গুলী চালায়। তাদের গুলীর আঘাতে ছাত্রদলের একজন ছাত্র তখন মৃত্যুবরণ করেছিল এবং অর্ধডজন বিএনপি নেতা গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো এবং জাতীয় শোক দিবস পালনকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছিল। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ শুধু মাত্র ছাত্রদলই নয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপরও সশন্ত্রভাবে চড়াও হয়েছিল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো এবং শোক দিবস পালনকে কেন্দ্র করে গোলযোগ হয়েছিল এবং ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষের ওপর গুলীবর্ষণ করে। এতক্ষণ ধরে অতি সংক্ষেপে যে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো সেগুলো তো খবরের কাগজে প্রকাশিত শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম সময়ের পুরোনো কথা। গত আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের ঘটনা এই বারের ২০১৩ দেশে জানুয়ারী মাস থেকে ঘটনা গণহত্যার ইতিহাস করেছে এই সরকার। এই বার নির্বাচনে জনগণ যদি জানতো যে নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ বিস্্মিল্লাহ বাদ দেবে নির্বাচিত হলে জিন্দাবাদ বাদ দেবে এবং জয়বাংলা চালু করবে তাহলে কি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিত? ভোটাররা যদি জানতো যে নির্বাচিত হলে ১৫ই আগস্টকে শোক দিবস বানাবে, ঘরে ঘরে শেখ মুজিবের ছবি টানাতে বাধ্য করবে, পাঠ্যগ্রন্থ পরিবর্তন করবে, স্কুল-কলেজে মুজিবুর দিবস পালিত হবে। যদি মানুষ জানতো যে ক্ষমতায় যেতে আওয়ামী লীগ ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার জন্য ওকালতি শুরু করবে তাহলে কি মানুষ এই সরকারকে ভোট দিত? অথচ গদিনসীন হয়ে শাসকদল সেই কাজগুলোই করছে। এই ছাত্রলীগ বিশ্বজিৎ হত্যার মতো নানা ঘটনা ঘটিয়েছে দেশে রানা প্লাজা ঘটনা দেশবাসীকে আজো ভাবায়।
‘আওয়ামী লীগ সরকার আসলে কি চায়?’ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানের মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়া, যাতে সেখানে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। এ কেমন সরকার, কেমন দেশ হচ্ছে আজ? পাঠ্য বইয়ে আল্ল্হাকে দেব-দেবীর সমতুল্য করা। এই হলো আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি। এই নীতির যদি কেউ প্রতিবাদ করে তবে তার বুক বরাবর গুলী করে তাকে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ সরকার আসলে কি চায়? সরকার মুসলমানের জন্য মসজিদে নামাজ পড়ার পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। মসজিদের গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। সেখানে কেউ নামাজ পড়তে গেলে তার সর্বাঙ্গ তল্লাশি করা হচ্ছে। লোকজনকে মসজিদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে! গ্রেফতার করা হচ্ছে! ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এটা কল্পনা করা যায় । মনে হচ্ছে, কোনো ভিন্ন ধর্মের সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি এদেশ দখল করে নিয়ে এখান থেকে ইসলাম নির্মূলের অভিযানে নেমেছে আজ। এএক ভয়াবহ খেলায় মেতেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ যুগে কোনো দেশ দখল করলেও সে দেশের মানুষের ধর্মের কোনো পরিবর্তন আনা যায় না। কোনো সা¤্রাজ্যবাদী দেশ সে চেষ্টাও করে না। কিন্তু নিজ দেশে মুসলমানেরা এতোটাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে যে তাদের ঈমান আকিদা আজ হুমকির মুখে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বর্বরতার চূড়ান্ত করে বসেছে। পাগলা হন্যে হয়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির খুঁজছে। কেন জামায়াত কি কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? শিবির যারা করে তারা কি যুদ্ধাপরাধী? যারা শিবির করে তারা এক ধরনের বিশ্বাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ভালোবাসেন রাজনীতি করেন। কারণ তারা পেয়েছেন বিশ্বাসী স্থান। সেটি হলো ইসলামের প্রতি তাদের অবিচল আস্থা। ছাত্রশিবির করছে অনেক ভাই যুদ্ধ দেখেনি, রাজাকার দেখেনি, পাকবাহিনী দেখেনি। শুধু গভীর এক বিশ্বাসের রাজপথে, প্রতিবাদ করছে সে কারণে সরকার তাদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশ পাগল হয়ে খুঁজছে। হাজার হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। তারুণ্যের বাতাস বইছে শাহবাগে সাথে কিছু প্রবীণও মানুষের গায়ে, জোয়ারের নৌকায় সবাই ছুটে যাচ্ছে সেইখানে। সুরে সুরে মিলিয়ে স্লোগান দিচ্ছে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ নানান রকম স্লোগান জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ কর, করতে হবে। দেশবাসী এখন সে নাটক দেখছে যাইহোক অন্য প্রসঙ্গে যাবো না। এই যদি হয় আন্দোলনকারীদের অবস্থা, তাহলে কি কারো বুঝতে বাকী থাকে যে এটা সরকারের একটা সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের ব্যানার লাগিয়ে গণতন্ত্রকে পায়ের তলে মাড়িয়ে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছে শেখ হাসিনার সরকার। আর এর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ছাত্রলীগকে এবং বামদলগুলোকে। শুধু আওয়ামী লীগ বলছেন বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, যখন শাহবাগীরা ইসলামের নামে প্রিয় নবীর নামে কথাবার্তা প্রচার করছে ১৮ দলসহ মতিঝিলে হেফাজত সেদিন দারুণ ভূমিকা রেখেছিল তারপর থেকে শাহবাগীদের উদ্যম আর আগের মতো নেই। তারা ত্রুমেই রণেভঙ্গ দিচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশের হাতে প্রতিদিন গুলী খেয়ে মারা যাচ্ছে দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল মানুষ, ইসলাম বিশ্বাস ও চেতনার মানুষ। সংবাদে আসছে ঢাকায় নিহত তিনজন, চট্টগ্রামে দুইজন, কক্সবাজারে দুইজন, বগুড়ায় দুইজন, সিলেটে তিন, পাবনায় তিন! সাম্প্রতিক আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলী করে গণহত্যা করেছে ১৭০ জন মানুষকে। এভাবে চলছে লাশের মিছিল সেখানেও গুলী। হত্যাকারীদের পাথর হৃদয় ফেটে পড়ছে না। ইসলামী হেফাযত আন্দোলনে মতিঝিলের সেই রাতের ঘটনা বিএনপি’র দাবি গণহত্যার। কর্তাব্যক্তিরা গর্জন করে চলছে, জামায়াত ঠেকাও, বিএনপি ঠেকাও ‘আরো কঠোর হও’ ক্রমবর্ধমান গণবিস্ফোরণ ঠেকাতে বিপথগামী ও নাস্তিক্যবাদী কিছু তরুণকে দিয়ে নাটক চলছে। পুলিশের পরে আসছে র্যাব, তারপর বিজিবি, তারপরে কি আনা হবে সেনাবাহিনী? এবং তারও পরে কী দেশটা বানানো হবে কাশ্মীর? আসলে আওয়ামী লীগ কী করছে যা তারা করছে তাহলো নির্লজ্জ মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি, অন্যের মতামত প্রকাশের অধিকার হরণ এবং নিজেদের আদর্শকে জোর করে জনগণের ঘাড়ে চাপানোর প্রচেষ্টা প্রতিদিন। সেই সাথে তারা ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয়ও গ্রহণ করে।
ফলে জনগণের নিকট প্রকাশ পায় হল মার্কের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, শেয়ার বাজারের এক লাখ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসে’র গাড়িতে প্রায় কোটি টাকা ধরা পড়ার কেলেঙ্কারিসহ অগণিত দুর্নীতির ঘটনা। দেখে যেন মনে হচ্ছে তারা যেমন দেশের সবকিছুর নাম নিজেদের করে নিতে চায় তেমনি দেশের সব অর্থকড়ি ও সম্পদেরও মালিকানা চায়। দুর্নীতির মাধ্যমে তারা দেশের প্রায় সব দুর্বৃত্তকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে দলকে মজবুত যেমন করেছে তেমনি অর্থ দিয়ে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলতে চাইছে একটি পঞ্চম বাহিনী। এই পঞ্চম বাহিনীর একটি হলো শাহবাগের তথাকথিত তরুণ প্রজন্ম এবং অন্যটি অনুগত শক্তিশালী একটি মিডিয়া। তারা এটিও আশা করতে পারে যে দুর্নীতির টাকার একটি অংকের বিনিময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা সাধারণ মানুষের ভোটও কিনতে পারবে। রাজনীতি জনসেবাকেন্দ্রিক নয়। দুর্নীতিকেন্দ্রিক। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের আচরণে। তাদের কাছে পদ্মা সেতুর চেয়ে সাবেক দুর্নীতিবাজ যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের মূল্য বেশী। রেলের দুর্নীতি প্রকাশ করার চেয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সাধু পরিচয়দানের প্রয়োজনীয়তা বেশী। শেয়ারবাজারের ৩০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থে চেয়ে তাদের শেয়ারবাজার লুণ্ঠক খালু কামালুদের সুরক্ষা বেশী প্রয়োজন। পুুলিশের এখন স্বাধীন সত্তা নেই! সরকার দলীয় নেতারা যেভাবে চালাচ্ছেন তারা সে ভাবেই চলছে। কাকে ধরতে হবে, কাকে মারতে হবে কার কাছ থেকে কতো টাকা আদায় করতে হবে সব কিছুই সরকারদলীয় নেতারা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার দলের কিছু নেতা যেমন অর্থবিত্তে রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে উঠছেন তেমনি পুলিশেরও কিছু সদস্য বটগাছ না হলেও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই অরাজকতার অবসান ঘটা জরুরি। আসামী করার হুমকি দিয়ে সমাজের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের ওপর যারা জুলুম নির্যাতন, হয়রানি চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। এ বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি বিরোধী দলসহ সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকেও এই পুলিশের আসামী বাণিজ্যের এবং এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এখনি।