এক ব্যক্তির শাসন ও একদলীয় শাসনের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি? নাকি তা একই স্বৈরাচারী শাসনের দুটি নাম? আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। এক ব্যক্তির শাসন ও একদলীয় শাসন সব সময় স্বৈরাচারী শাসনের সমার্থবোধক নয়। এ ধরনের শাসনও যদি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক হয়, তাহলে আধুনিক গণতন্ত্রে তার মান্যতা ও অনুমোদন রয়েছে। আর বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছায় গঠিত পার্লামেন্টের যদি সার্বভৌমত্ব না থাকে, জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকে, তাহলে তা স্বৈরাচারী শাসনের রাবার স্ট্যাম্প, গণতন্ত্রের প্রতিভূ নয়।এই বিতর্কিত তত্ত্বটির গ্রহণযোগ্যতা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ক্রমেই বাড়ছে।
গণতন্ত্র একটি চলমান পদ্ধতি, ধর্মবিশ্বাস বা কোনো মতবাদের মতো অপরিবর্তনীয় নয়। গ্রিক সিটি স্টেটের গণতন্ত্র, ম্যাগনাকার্টার যুগের গণতন্ত্র, এমনকি উনিশ শতকের গণতন্ত্রের সঙ্গেও বর্তমানের অবাধ তথ্য-প্রযুক্তি যুগের গণতন্ত্রের পার্থক্য সুস্পষ্ট। তারপর তো এ যুগেই ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুকর্ন নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র (Controlled Democracy), মাও জেদং নয়া গণতন্ত্র (New Democracy) এবং শেখ মুজিবুর রহমান শোষিতের গণতন্ত্রের (Democracy of exploited) তত্ত্ব দিয়েছিলেন।
অপরিবর্তনশীলতার জন্য সোভিয়েত কমিউনিজম ৭০ বছরও টেকেনি। মাও জেদংয়ে নয়া গণতন্ত্রের আয়ু আরো কম। সুকর্নের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিবিপ্লবী চক্রান্তের মুখে টেকেনি। এমনকি পাকিস্তানের আইয়ুবের তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্র ১০ বছরও স্থায়ী হয়নি।কিন্তু সাত শ বছরের আদি গণতন্ত্র এখনো নানা ঝড়, আঘাতের মধ্যে টিকে আছে, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে। কারণ তার পরিবর্তনশীলতা, যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে তারও চরিত্র বদল এবং ধর্ম বা কোনো মতবাদের মতো অন্ধবিশ্বাস নয়, বিজ্ঞানের মতো বিশ্বাস ও কর্মের গতিশীলতা। গণতন্ত্র তাই সাত শ বছর পেরিয়ে এখনো টিকে আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে চরিত্র পাল্টাবে।
সামন্ততন্ত্রের যুগে এক ব্যক্তির শাসন সম্ভব ছিল। সামাজিক প্যাটার্নই ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এটা পরিবার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরিবারে বাবাই ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি মারা গেলে মা। মায়ের অভাবে বড় ভাই। দেশ শাসন করতেন বংশানুক্রমে রাজা-বাদশাহরা। ধনতান্ত্রিক যুগের আবির্ভাবে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে। ইউরোপে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। ধীরে ধীরে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করার পর পশ্চিমা গণতন্ত্রের অনুসরণ শুরু করে।
যে ধনতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্রকে তার প্রাথমিক যুগের বিকাশে সাহায্য জুগিয়েছে, সেই ধনতন্ত্রই পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্রের বিকাশে সারা বিশ্বেই মানুষ তাদের স্বার্থ ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এটা ধনতন্ত্রের শাসন ও শোষণের অন্তরায়। ফলে গণতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন দেশে অনুগত আমলাতন্ত্র ও সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো দেশে সেনা অফিসারদের দ্বারা রাজনৈতিক দল গঠন করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেশটির মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। তাঁবেদার সেনাশাসককে ‘লৌহমানব’, ‘জাতির ত্রাণকর্তা’ ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হয়।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এ ঘটনাই ঘটেছে। আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদের অভ্যুদয় একই কায়দায় এবং পতনও একইভাবে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম এই সেনাশাসনের এ-টিম ও বি-টিম হিসেবে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল জামায়াত, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ প্রভৃতি মৌলবাদী দল। পাকিস্তানের আয়েশা সিদ্দিকীর ভাষায় যা ছিল ‘ঈড়সনরহধঃরড়হ ড়ভ সড়ংয়ঁব ধহফ সরষরঃধৎু.’ (মসজিদ ও মিলিটারির সমন্বয়)। উদীয়মান নব্য ধনীরা তখনো নিজেরা শক্তিশালী হতে না পারায় এই সমন্বিত শক্তির নেতৃত্ব আপাতত মেনে নিয়েছিলেন।
জিয়া ও এরশাদকে স্বৈরশাসক বলা হয়; কিন্তু তাঁরাও এক ব্যক্তির শাসন দেশে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তাঁরা ছিলেন পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক শক্তির পালিত এবং দেশের নব্য ধনী ও সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির ইচ্ছায় চালিত তথাকথিত ডিক্টেটর। দেশের সামাজিক পরিবেশ এখনো আধাসামন্তবাদী হওয়া সত্ত্বেও সামন্ত যুগের রাজা-বাদশাহর মতো একক কর্তৃত্ব তাঁরা খাটাতে পারেননি। প্রভুর ইচ্ছায় তাঁদের কর্ম করতে হয়েছে।
এ কথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছিলেন পাকিস্তানের সেনাশাসক থাকাকালে জেনারেল আইয়ুব। তিনি বলেছিলেন, ‘এ যুগে যে একক শাসক হওয়া যায় না, এ কথা অনেকে বোঝে না। রাষ্ট্র চালানো এখন অনেক জটিল। এক ব্যক্তির পক্ষে শুধু নিজের ইচ্ছায় চালানো যায় না। ব্যুরোক্র্যাট, টেকনোক্র্যাট, ধর্মীয় নেতা, বিগ বিজনেস ইত্যাদি বহু কিছুর সমর্থন ও পরামর্শ নিতে হয়। জনগণের সম্মতি না নিয়ে দেশ চালাতে গেলে এদের সমর্থন ও পরামর্শ ছাড়া কারো পক্ষে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়।’
আইয়ুবের এই বক্তব্য একটি স্বীকারোক্তি। তাঁর সামরিক বাহিনী ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। বাংলাদেশে জিয়া একটু বাড়াবাড়ি করেছিলেন। তাঁর প্রয়োজন ফুরোতে তাঁকে হত্যা করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরশাদেরও প্রয়োজন ফুরোলে তাঁকে হত্যা না করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তাঁর শাসনের শেষ সময়ে তাঁর প্রধান সেনাপতিই তাঁর হুকুম মানেননি।
এক ব্যক্তির ও একদলীয় শাসন সম্পর্কে আমার যে আজ এত কথা, তার কারণ ঢাকার একটি কাগজে পাশাপাশি দুটো খবর ছাপা হয়েছে ৮ মে ডেটলাইনে। একটিতে ড. কামাল হোসেন তাঁর গণফোরামের সভায় অভিযোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে। তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’ অন্য খবরটিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডনে দেওয়া একটি বিতর্কিত বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য একদলীয় শাসনের বহিঃপ্রকাশ।’ অর্থাৎ একই রাজনৈতিক জোটের এক নেতা শেখ হাসিনার শাসনকে বলেছেন এক ব্যক্তির শাসন এবং অন্যজন বলেছেন একদলীয় শাসন।
এই বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, দুজনেই কানাগলির রাজনীতিক। বাস করছেন একুশ শতকে; কিন্তু কথা বলছেন সত্তর বছর আগের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়নি। রাজনীতির সেই পুরনো কেতাবেরই বুলি আওড়াচ্ছেন। নতুন কেতাবের পাতা উল্টানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। বর্তমানের পরিবর্তিত রাজনীতিতেও তাই তাঁরা সুবিধা করতে পারছেন না।
আধুনিক গণতন্ত্রের চরিত্র ও চেহারা আজ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। যে ওয়েস্টমিনস্টার ডেমোক্রেসির আমরা উপাসক, সেই গণতন্ত্রের ব্রেক্সিট সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধানে টেরেসা মের ত্রিশঙ্কু অবস্থা দ্বারা আমরা বুঝতে পারছি না? এক পশ্চিমা রাজনীতিকই বলেছেন, One man rule is impossible in the complex situation of present world in the new pattern of democracy. (বর্তমান জটিল পরিস্থিতির বিশ্বে এবং গণতন্ত্রের নয়া পদ্ধতিতে এক ব্যক্তির শাসন সম্পূর্ণ অসম্ভব।)
শুধু কোনো দেশে নয়, কোনো দলেও এখন এক ব্যক্তির কর্তৃত্ব অসম্ভব। ব্রিটেনে টরি ও লেবার পার্টির অবস্থা কী? টেরেসা মে ও জেরেমি করবিনের নেতৃত্ব বারবার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আমেরিকায় ডেমোক্রেটিক দল নেতৃত্বহীন। রিপাবলিকান দল ঐক্যহীন। বাংলাদেশে ড. কামাল হোসেন, নিজের দলের দিকে তাকিয়ে দেখুন। গণফোরামের জন্মলগ্ন থেকে তিনি সভাপতি। এখন পর্যন্ত তিনি দলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে কাউকে সভাপতি হতে দেননি বা চাননি।
তার পরও তিনি একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন কি? গত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল থেকে দুজন মাত্র এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা দুজনই তাঁর নির্দেশ অমান্য করে সংসদে শপথ নিয়েছেন। তিনি একজনকে বহিষ্কার করেছেন। আরেকজনকে গিলতে বাধ্য হয়েছেন। ব্রিটেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যাবে স্ট্রং লিডারশিপের অভাবে সেসব দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভোগার পর হাসিনার নেতৃত্ব যদি স্থিতিস্থাপক শক্তি হিসেবে কাজ করে, তা কি সবার কাম্য নয়? তাতে যদি কেতাবি গণতন্ত্রে এক-আধটু আঁচড় লাগে তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু আছে কি?
আধুনিক গণতন্ত্রে এক ব্যক্তির শাসন বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেই। কিন্তু একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে। তবে সেই একদলীয় শাসনকেও নির্বাচিত ও জনগণের অনুমোদনপ্রাপ্ত হতে হবে। একদলীয় শাসন দুই ধরনের। কোনো দল যদি বন্দুকের দ্বারা ক্ষমতা দখল করে বন্দুকের সাহায্যে ক্ষমতার থাকতে চায়, তা অবশ্যই অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ। কিন্তু কোনো দল যদি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আসে এবং জনগণ ভোট না দেওয়ায় পার্লামেন্টে বিরোধী দল গড়ে না ওঠে, সে অবস্থায় পার্লামেন্টের অস্তিত্ব বজায় রেখে দেশ শাসন অবশ্যই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর জওয়াহেরলাল নেহরু এবং তাঁর কংগ্রেস শুধু কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে একচেটিয়াভাবে নির্বাচিত হয়েছে। নেহরু চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীও প্রায় তাই। তাতে এই শাসনকে একদলীয় বা অগণতান্ত্রিক কেউ বলেনি। ফ্রান্সে দ্য গল পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়লে তা ভেঙে দিয়ে প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। গণভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘকাল দেশ শাসন করেছেন। কেউ তাঁকে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা বা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী করেনি। কিন্তু স্পেনে জেনারেল ফ্রাংকোর জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল ও দেশে বিরোধী দল গঠন করতে না দেওয়াকে এক ব্যক্তির শাসন বলে নিন্দা করা হয়েছে। কমিউনিস্ট শাসন পদ্ধতিও রাশিয়ায় একদলীয় ছিল। চীনে এখনো আছে। বিরোধী দল গঠন সেখানে নিষিদ্ধ।
কখনো কখনো গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতিতেও দেশ ও জাতির প্রয়োজনেই বিরাট প্রভাব ও জনপ্রিয়তা নিয়ে শক্তিশালী নেতার আবির্ভাব ঘটে। যেমন জর্জ ওয়াশিংটন, কামাল আতাতুর্ক, মহাত্মা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ। জাতি তাঁদের নেতৃত্ব দীর্ঘকাল ধরে রাখতে এবং ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছে। গান্ধী তো কংগ্রেসের দুই আনার সদস্যও ছিলেন না। কংগ্রেসের সভাপতি ও সম্পাদকও হননি। কিন্তু মৃত্যুকাল পর্যন্ত ছিলেন কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর ইঙ্গিতে কংগ্রেস উঠত-বসত। ইরানের আয়াতুল্লাহ খামেনির মতো। শাসনক্ষমতায় বসেননি, কিন্তু দেশ শাসন করেছেন।
কোনো কোনো দেশ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়ালে স্ট্রং লিডারশিপের প্রয়োজন বোধ করে। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের জাতীয় বিপর্যয়ের
(National tragedy) পর এই শক্ত নেতৃত্বের অভাবে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। এই দুঃসময়ে নেতৃত্বের এই অভাব পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার সাহস দেখিয়ে তিনি আজকের জাতীয় নেতার পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তাঁর চেয়ে বয়সে, বিদ্যা-বুদ্ধিতে অনেক বড় হওয়ার দাবিদার হয়েও ড. কামাল বা আর কেউ এই অবস্থায় পৌঁছতে পারলেন না কেন? কারণ দেশপ্রেমের অভাব, সাহসের অভাব। এখন বৃদ্ধ বয়সের অক্ষম ঈর্ষা নিয়ে শেখ হাসিনার পেছনে লেগে কোনো লাভ আছে কি?
শেখ হাসিনা দেশে এক ব্যক্তির শাসন কিংবা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেননি। তিনি দেশের শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাব পূরণ করেছেন। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি নির্বাচনে লড়ে ক্ষমতায় এসেছেন। নির্বাচনে হেরে গেলে ওজর-আপত্তি না করে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিরোধী দল গঠনে বা নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরোধী দলকে বাধা দেননি। পার্লামেন্ট যে দীর্ঘকাল বিরোধী দলশূন্য ছিল তার জন্য প্রধান বিরোধীদলীয় মোর্চার বর্জননীতিই প্রধান কারণ ছিল। ড. কামাল হোসেনের বারবার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার জন্য দায়ী কি শেখ হাসিনা?
বাংলাদেশে গত দুটি সাধারণ নির্বাচনেই অনিয়ম-অবৈধ কাজের অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমেরিকার গত দুটি প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এবারের নির্বাচনে তো বিদেশি (রাশিয়ান) কানেকশনের তদন্ত হয়েছে। তথাপি বিরোধী দল তাকে তাদের বর্তমান রাজনীতির মূল ইস্যু করে বিতর্ক জিইয়ে রাখেনি। জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে ট্রাম্পের বিভিন্ন কার্যকলাপকে বিরোধিতার ইস্যু করেছে।
বাংলাদেশে প্রধান বিরোধীদলীয় মোর্চাটির এখনো একমাত্র রাজনৈতিক ইস্যু গত নির্বাচনকে অবৈধ বলে প্রচারণা চালানো, যা জনগণের কাছে এখন আর কোনো ইস্যু নয়। জনগণের কোনো প্রকৃত দাবিকে ইস্যু করে বিরোধী জোট এখন পর্যন্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার কোনো তৎপরতা দেখাতে পারেনি। তাদের এক নেতা তারেক রহমানের রাজনীতি হলো শেখ হাসিনা লন্ডনে গেলে তাঁর হোটেলের সামনে গুণ্ডামি করা এবং দেশে তাঁর জোটের নেতাদের শুধু ঘরে বসে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কেতাবি গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানো একমাত্র কাজ।
ড. কামাল হোসেন শেখ হাসিনার আসন উত্খাতের ডাক দিয়েছেন। এটা মেঠো হুংকার, সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সরকার উত্খাত হলে তার বিকল্পটা কী? তিনি নিজে তো হতে পারলেন না। কোনো দিন পারবেন না। তাহলে ’৭১-এর পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, হিংস্র মৌলবাদ, কর্তৃত্ববাদী কোনো অপশক্তিকে ক্ষমতায় আনার ব্যর্থ প্রচেষ্টাই কি তার শেষ বয়সের রাজনীতি? তাতে তিনি সফল হবেন কি?